In This Article
- 1 ভূমিকা: প্রতিবেশী ভ্রমণের টানে
- 2 ঢাকায় ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র: কোথায়, কীভাবে যাবেন?
- 3 ভিসা প্রক্রিয়ার সময়: ধৈর্য্যই এখন মূল চাবিকাঠি
- 4 ভিসা আবেদন করার প্রস্তুতি: যা আপনার জানা উচিত
- 5 সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা: ঝামেলার মাঝে পথ খোঁজা
- 6 ঢাকার বাইরে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র কোথায়?
- 7 কোন ভিসার জন্য কী লাগে: ভিসার ধরন অনুযায়ী বিস্তারিত
- 8 খরচ ও সময়: আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যয় ঠিক করুন
- 9 আবেদন কেন্দ্র যাওয়ার প্রস্তুতি: দিনটি হোক ঝামেলাহীন
- 10 বাস্তব অভিজ্ঞতা: যখন ট্রাস্ট আর ধৈর্য্য মিলে ফল দেয়
- 11 শেষ কথা: আপনার ভ্রমণের প্রথম সঙ্গী—একটা সঠিক তথ্য
ভূমিকা: প্রতিবেশী ভ্রমণের টানে
একটা সময় ছিল যখন ভারতের দিকে তাকিয়ে আমরা বলতাম—“ওপারে কেমন জানি এক রহস্যময় দেশ, সিনেমার মতো।” আর এখন? বাংলাদেশ থেকে ভারতের কলকাতা, দার্জিলিং, দিল্লি বা শিমলার পথে ট্রিপ দেওয়া যেন এক রুটিন অভ্যাস হয়ে গেছে। চিকিৎসা, পড়াশোনা, ব্যবসা কিংবা শুধুই ঘুরে বেড়ানোর জন্য হাজার হাজার মানুষ ভারতীয় ভিসা আবেদন করে চলেছেন প্রতিদিন।
তবে সবচেয়ে বেশি শুনতে পাওয়া প্রশ্নটি হলো—“ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র কোথায়?”
এই একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে যান। বিশেষ করে ঢাকায় যারা প্রথমবার আবেদন করতে চান, তাদের জন্য পুরো প্রক্রিয়াটাই একটু জটিল মনে হয়।
এই লেখায় আমি আপনাকে বন্ধুর মতো হাত ধরে নিয়ে যাব ভিসা আবেদন কেন্দ্র কোথায়, কীভাবে যাবেন, কীসের জন্য অপেক্ষা করবেন, কীভাবে প্রিপারেশন নেবেন—সব কিছু নিয়েই। বাস্তব অভিজ্ঞতা, আবেগ আর তথ্যের সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে এই গাইড।
ঢাকায় ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র: কোথায়, কীভাবে যাবেন?
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আইভিএসি-জেএফপি (IVAC-JFP) নামক প্রতিষ্ঠান ভারতীয় ভিসা সেবার দায়িত্বে আছে। এটি বর্তমানে সীমিত পরিসরে আবার চালু হয়েছে। করোনা মহামারির পরে কিছুটা শিথিল হলেও এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি সব কার্যক্রম।
ভিসা আবেদন কেন্দ্রের ঠিকানা:
ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (IVAC-JFP)
হাউজ ১২, রোড ১৩, ব্লক ডি, বনানী, ঢাকা ১২১৩
যাওয়ার জন্য বনানী ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে এসে ডান দিকে ঘুরলেই আপনি সহজেই পেয়ে যাবেন আবেদন কেন্দ্রটি।
তবে শুধু লোকেশন জানলেই হবে না। আপনাকে জানতে হবে, কবে কখন আপনি যেতে পারবেন, কারণ এখন তারা SMS-এর মাধ্যমে আলাদা আলাদা করে উপস্থিত হওয়ার তারিখ জানায়।
কীভাবে বুঝবেন আপনি কখন যাবেন?
-
আপনি অনলাইনে আবেদন করে সাবমিট করলে
-
তারপর পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য পৃথক বার্তা আসবে
-
সেই নির্দেশনা মোতাবেক নির্দিষ্ট দিনে আপনি IVAC-এ হাজির হতে পারবেন
এখন প্রশ্ন: এই সীমিত কার্যক্রমের পেছনে কারণ কী?
মূলত মহামারির পরে ভারতের পলিসি কিছুটা বদলেছে, সেইসঙ্গে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসের সময়ও বেশ কিছুটা বেড়ে গেছে। প্রক্রিয়ার সময় বেড়ে যাওয়ায় অনেকে দুশ্চিন্তায় পড়লেও আসলে প্রক্রিয়াটি এখন আরও গুছানো এবং ট্র্যাকযোগ্য।
ভিসা প্রক্রিয়ার সময়: ধৈর্য্যই এখন মূল চাবিকাঠি
আগে যেখানে আবেদন করে তিন–চার দিনের মধ্যেই ভিসা পাওয়া যেত, সেখানে এখন তা দেড় থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিচ্ছে। এই সময় বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে:
-
সীমিত স্টাফ
-
আবেদনকারীর সংখ্যা প্রচুর
-
নথি যাচাইয়ের কড়াকড়ি
-
সিস্টেম আপডেট
এই কারণে আপনাকে ভিসা অ্যাপ্লাই করার পর অনেকটা ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। যারা পাসপোর্ট জমা দিয়ে ঘন ঘন স্ট্যাটাস চেক করেন, তাদের জন্য একটাই পরামর্শ—SMS না পাওয়া পর্যন্ত আপনি IVAC-এ যাবেন না।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী:
-
আবেদন সাবমিট হওয়ার পর
-
প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে
-
ভিসা রেডি থাকলে
-
তখনই SMS/ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয় কবে আপনি পাসপোর্ট নিতে যাবেন
এই ব্যবস্থাটি হয়তো আপনাকে অপেক্ষা করায়, কিন্তু ভিড় কমে, ঝামেলা হয় না এবং সব কিছু খুব সুশৃঙ্খলভাবে হয়।
ভিসা আবেদন করার প্রস্তুতি: যা আপনার জানা উচিত
অনেকেই ভাবেন আবেদন মানেই শুধু ফর্ম পূরণ আর ছবি দেওয়া। কিন্তু আসলে তার চেয়েও বেশি কিছু দরকার হয়। “ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র কোথায়?” জানার পাশাপাশি আপনাকে প্রস্তুত হতে হবে আবেদন করার জন্য।
নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো:
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র | বিবরণ |
---|---|
পাসপোর্ট | ৬ মাসের মেয়াদসহ, ২টি খালি পৃষ্ঠা থাকতে হবে |
আবেদন ফর্ম | অনলাইনে পূরণ করে প্রিন্ট করে নিতে হবে |
ছবি | সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে ২x২ ইঞ্চি ছবি (ম্যাট ফিনিশ) |
ঠিকানার প্রমাণ | জাতীয় পরিচয়পত্র বা ইউটিলিটি বিলের কপি |
ব্যাংক স্টেটমেন্ট | অন্তত ৬ মাসের ব্যালেন্স সহ |
অতিরিক্ত কিছু টিপস:
-
ব্যাংক ব্যালেন্স যেন কমপক্ষে ২০,০০০ টাকা থাকে
-
মেডিকেল বা স্টুডেন্ট ভিসার জন্য নির্দিষ্ট কাগজপত্র প্রয়োজন হয়
-
ফর্ম পূরণের সময় বানান ও পাসপোর্ট নম্বর হুবহু ঠিক রাখতে হবে
আপনি যদি ভ্রমণের জন্য যান, তবে আপনার হোটেল বুকিং ও রিটার্ন টিকিটের স্ক্যান কপিও অনেক সময় চাওয়া হয়।
সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা: ঝামেলার মাঝে পথ খোঁজা
আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, নাম লাবিব, যিনি গত মাসেই কলকাতা ঘুরে এলেন। সে বলছিল, “দোস্ত, আমি ভাবছিলাম ভিসা পাওয়া বুঝি এখন মিরাকল। কিন্তু ওরা তো খুবই প্রফেশনালি সব কিছু করছে।”
লাবিব অনলাইনে আবেদন করে পাঁচ দিন অপেক্ষা করেছিল। এরপর সে SMS পেল আর নির্ধারিত দিনে IVAC-এ গিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করল।
তার অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায়—যদি আপনি নিয়ম মেনে, ধৈর্য্য নিয়ে কাজ করেন, তাহলে ভিসা পাওয়া এখনো অনেক সহজ। শুধু দরকার তথ্য জানা এবং সময় ধরে অপেক্ষা করা।
ঢাকার বাইরে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র কোথায়?
অনেকে মনে করেন ভিসার জন্য শুধু ঢাকাতেই যেতে হবে। কিন্তু “ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র কোথায়?”—এই প্রশ্নের উত্তর যদি একটু খুঁটিয়ে দেখি, তবে বুঝি বাংলাদেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি আইভিএসি (IVAC)।
নিচে কিছু শহরের আবেদন কেন্দ্রের তালিকা দেওয়া হলো:
শহর | আবেদন কেন্দ্রের ঠিকানা |
---|---|
চট্টগ্রাম | ৪৩, মুজাফফর নগর, CDA, বায়েজিদ |
খুলনা | ১৯/বি, শিববাড়ি মোড়, খুলনা সদর |
রাজশাহী | লক্ষ্মীপুর, নতুন বাজার, রাজশাহী শহর |
বরিশাল | বান্দ রোড, সদর রোড সংলগ্ন |
সিলেট | লালা বস্তি, কাজলশাহ মোড় |
আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার কাছাকাছি আইভিএসি সেন্টার আছে কিনা তা জেনে নিতে পারেন https://www.ivacbd.com ওয়েবসাইট থেকে।
তবে মনে রাখবেন, প্রত্যেক সেন্টারের সময় ও প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে।
কোন ভিসার জন্য কী লাগে: ভিসার ধরন অনুযায়ী বিস্তারিত
ভারতের জন্য শুধু ট্যুরিস্ট ভিসা নয়, আরও অনেক ধরনের ভিসা আছে। প্রতিটির আবেদন প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আলাদা।
ট্যুরিস্ট ভিসা:
-
পাসপোর্ট ও আবেদন ফর্ম
-
২ কপি ছবি
-
হোটেল বুকিং/আত্মীয়ের ইনভাইটেশন
-
রিটার্ন টিকিট
-
ব্যাংক স্টেটমেন্ট
মেডিকেল ভিসা:
-
ভারতীয় হাসপাতাল থেকে ইনভিটেশন লেটার
-
বাংলাদেশের ডাক্তার/হাসপাতালের রেফারেন্স
-
রোগীর প্রোফাইল
-
চিকিৎসার খরচ বহনের প্রমাণ
স্টুডেন্ট ভিসা:
-
ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন লেটার
-
I-20 বা সমমানের ডকুমেন্ট
-
স্পনসরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
-
মেডিকেল ও ইনস্যুরেন্স কপি
বিজনেস ভিসা:
-
ভারতীয় কোম্পানির ইনভাইটেশন
-
নিজের কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স
-
ব্যাংকিং প্রমাণ
-
কাস্টমস বা ট্রান্সপোর্ট ডকুমেন্ট
প্রতিটি ভিসা প্রসেসে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যে ডকুমেন্ট দেবেন তা যেন স্পষ্ট, হালনাগাদ এবং সত্য হয়। স্ক্যান করা কপি জমা দেওয়ার সময় ঝকঝকে ইমেজ ব্যবহার করুন।
খরচ ও সময়: আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যয় ঠিক করুন
বর্তমানে ভারতীয় ভিসা আবেদন করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ফি রয়েছে, যা নির্ভর করে ভিসার ধরন এবং প্রসেসিং টাইমের উপর।
ভিসা টাইপ | মেয়াদ | ফি (BDT আনুমানিক) |
---|---|---|
ট্যুরিস্ট | ৬ মাস | ৫৫০ টাকা |
মেডিকেল | ৩ মাস | ৫৫০ টাকা |
বিজনেস | ১ বছর | ১১০০ টাকা |
স্টুডেন্ট | ১+ বছর | ১৬৫০ টাকা |
প্রক্রিয়াকরণের সময়:
-
সাধারণত ৭–১০ কর্মদিবস
-
মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসা একটু বেশি সময় নিতে পারে
-
ফেস্টিভ সিজনে বা হাই ডিমান্ড টাইমে সময় বেড়ে যেতে পারে
খেয়াল রাখতে হবে—প্রসেসিং সময় মানেই পুরো প্রক্রিয়া শুরু থেকে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত সময়।
আবেদন কেন্দ্র যাওয়ার প্রস্তুতি: দিনটি হোক ঝামেলাহীন
“ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র কোথায়?” জানার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আবেদন কেন্দ্রে যাওয়ার দিনটি ভালোভাবে সাজিয়ে নেওয়া।
চেকলিস্ট:
-
আবেদন ফর্মের প্রিন্ট
-
পাসপোর্ট ও কপি
-
ছবি ২ কপি
-
সব ডকুমেন্টের ফোল্ডার
-
ফি জমা দেওয়ার রসিদ (যদি থাকে)
SMS পাওয়ার আগে কখনোই না গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। নির্ধারিত তারিখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যাওয়ার চেষ্টা করুন। ভিড় কমাতে আইভিএসি বর্তমানে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বেজড সিস্টেমে কাজ করছে।
বাস্তব অভিজ্ঞতা: যখন ট্রাস্ট আর ধৈর্য্য মিলে ফল দেয়
আমার এক আত্মীয়া, সায়মা আপা, যিনি চেন্নাইতে চিকিৎসার জন্য ভিসা নিয়েছিলেন। উনি প্রথমে একটু চিন্তিত ছিলেন ভিসা পাবেন কি না। কিন্তু আমরা আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করার পরে সব কিছু এত সুন্দরভাবে এগোল যে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
ওনার অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছিলাম:
“তথ্য ঠিক রাখুন, কাগজ প্রস্তুত রাখুন, এবং অপেক্ষা করতে শিখুন—তাহলেই ভিসা পাওয়া আর কষ্টের কিছু নয়।”
এই গল্পটি শেয়ার করার কারণ একটাই—অনেকেই ভিসা নিয়ে ভীত থাকেন, কিন্তু একটু নিয়ম মানলেই সফল হওয়া যায়।
শেষ কথা: আপনার ভ্রমণের প্রথম সঙ্গী—একটা সঠিক তথ্য
শেষ পর্যন্ত বলতেই হয়, “ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র কোথায়?” এই প্রশ্নের উত্তর শুধু একটা ঠিকানা নয়, বরং এটা একটা যাত্রার শুরু।
সেই যাত্রা যেখানে আপনি প্রস্তুতি নেন, তথ্য সংগ্রহ করেন, আর একটা সীমান্তের ওপারে নতুন অভিজ্ঞতার দিকে পা বাড়ান।
আজকের এই আর্টিকেলে যা শিখলেন তা হলো:
বাংলাদেশে বিভিন্ন IVAC সেন্টার কোথায়
কোন ভিসার জন্য কী লাগবে
আবেদন করার সময় কী প্রস্তুতি নেবেন
এবং অপেক্ষার সময় নিজেকে ধৈর্য্য ধরে রাখার উপায়
এবার আপনার পালা—ভ্রমণ ব্যাগ গুছিয়ে ফেলুন, সব কাগজ প্রস্তুত করুন, আর অপেক্ষা করুন সেই SMS-টার জন্য।
আপনার ভিসা যাত্রা হোক মসৃণ, নিরাপদ আর আনন্দময়।